মোছা. রেজওয়ানা আক্তার সাথী (১৮)। নীলফামা'রী সদর উপজে'লার খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের শি'ঙ্গিমা'রি মাজাডা'ঙ্গা গ্রামের মো. চান্দুর কন্যা। মাছ চাষী বাবার মেয়ে সাথী বাড়ির পাশেরই মাজাডা'ঙ্গা তৈমুন্নেছা দাখিল মা'দরাসার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারীতে মেয়েটি দাখিল পরীক্ষা দিতো। কিন্তু এসব এখন শুধুই অতীত। সংসার জীবনে প্রবেশ করে আশে-পাশে থাকা মানুষগু'লোকে আপন করার শত চেষ্টা করেও ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে যন্ত্রণাসিক্ত হৃদয়ে মেয়েটি পৃথিবী ছেড়েছে। বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় নিজের বাসায় গ্যাস ট্যাব'লেট খেয়ে সাথী আ'ত্মহ'ত্যা করে। গ্যাস ট্যাব'লেট খেতে খেতেই সাথী লিখে গেছে ‘সু'ইসাইড নোট’। তিন পৃষ্ঠার সেই চিরকুটে সে লিখে গেছে তার মনের সকল জমানো কষ্টের কথা, জানিয়ে গেছে স্বামীর ভালবাসা না পাবার বেদনা, বলে গেছে স্বামীর হাতে নিজের বাবা-মা'র অ'পমান-অ'পদস্থের কথা, প্রশ্ন করে গেছে, তাকে কষ্ট দিয়ে তার স্বামী কি পেল! অথচ, এত যন্ত্রণা নিয়েও চিরকুটে তার আকুতি ছিল, তার স্বামী যেন ভাল থাকে। সে চিরকুট পড়ে কেঁদেছে নীলফামা'রীর হাজারো মানুষ। অনুসন্ধানে জানা যায়, সবেমাত্র কৈশোর পেরোনো মেয়েটির সাথে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় একই ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী টেপুরডা'ঙ্গা গ্রামের সোনামুদ্দিনের ছেলে জসিম উদ্দিনের সাথে। জসিম বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একজন সৈনিক এবং বাহিনীটির সদর দ'প্তর ঢাকায় কর্মর'ত। বিয়ের পর বেশ ভালোই চলছিল তাদের সংসার। চাকরীর জন্য জসিম কর্মক্ষেত্রে অবস্থান করায় শ্বশুড়বাড়িতে স্থায়ীভাবে থাকা হয়নি সাথীর। যখন স্বামী আসতো তখন তাকে তার শ্বশুড়বাড়ির লোকজন গিয়ে নিয়ে আসতো। আবার যখন স্বামী কর্মক্ষেত্রে যেতো তখন সে বাবার বাড়িতে থাকতো। এভাবেই চলছিল তাদের মাত্র ১০ মাসের সংসার।
সাথীর মা জয়নব বেগম জানায়, আমা'র মেয়েকে আমা'র জামাই (জসিম) পছন্দ করে বিয়ে করে। জামাই নৌবাহিনীর সৈনিক হওয়াতে মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে তাকে পাঁচ লক্ষ টাকা যৌ'তুক দেই। প্রথম প্রথম ভালোই চলছিল মেয়ের সংসার। কিন্তু বিয়ের ছয়মাস যেতে না যেতেই আমা'র মেয়ের উপর চলতে থাকে অমানবিক মানসিক নি'র্যাতন। নি'র্যাতনের প্রস'ঙ্গ আসতেই কান্নায় ভে'ঙ্গে পড়েন তিনি। এরপর চোখ মুছতে মুছতে তিনি বলেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ১৪ দিনের ছুটিতে বাড়িতে আসে আমা'র জামাই। এরপর আমা'র মেয়েকে বাসায় নিয়ে যায়। কিন্তু সেই ১৪ দিনের মধ্যে ২দিন আমা'র মেয়েকে তার ঘরে নেয়নি এবং বাকি ১২দিন আমা'র মেয়েকে মেঝেতে শুইয়ে সে (জামাই) বিছানায় ঘু'মিয়েছে। জয়নব বলেন, আমা'র মেয়ের সাথে মোবাইল ফোনে বেশীরভাগ সময় কথা বলতো আমা'র জামাই। কিন্তু আমি এমন কোন দিন দেখিনি যেদিন আমা'র মেয়ে মোবাইলে কথা বলা শেষে হাউমাউ করে কান্না করেনি। আমি আমা'র মেয়েকে জিজ্ঞেস করলে আমা'র মেয়ে আমাকে বলতো, তোমা'দের জামাই আমাকে পেয়ে সুখী নয়। তার চেহারা অনেক সুন্দর, আমা'র রুপ নেই। তার পাশে স্ত্রী হিসেবে দাঁড়াবার কোন যোগ্যতা নেই আমা'র। তোমা'র জামাই আমাকে বারবার বলে, সে যেন আমাকে আর না দেখে।
তিনি বলেন, বুধবার (৭ নভেম্বর) রাতে ঢাকা থেকে নীলফামা'রী আসার কথা ছিল সাথীর স্বামী জসিমের। এ নিয়ে রাত দুইটা-আড়াইটা পর্যন্ত সাথীর সাথে মোবাইলে ঝগড়া হয় জসিমের। সাথী রাগ করে তার মোবাইল ফোন ভে'ঙ্গে ফেলে। তখন সাথীকে জিজ্ঞেস করলে সাথী আমাকে জানায়, আমা'র জামাই নাকি বলেছে, আমি ঢাকায় আরেকটা বিয়ে করবো। এবার বাড়িতে গিয়ে যেন তোমাকে না দেখি। তুমি এখনও মর'ো নাই? একথা বলার পরপরই তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, রাতে কথা বলার পরই সকালে (বৃহস্পতিবার ৮ নভেম্বর) মনের কষ্ট সইতে না পেরে আমা'র মেয়ে গ্যাস ট্যাব'লেট খেল। দুপুর ১২টায় নীলফামা'রী আধুনিক সদর হাসা'পাতালে নেয়া হলো। সেখান থেকে পাঠানো হলো রংপুর মেডিক্যালে। কিন্তু! আমা'র মেয়ে কই? আমা'র মেয়ে তো সত্যিই সত্যিই স্বামীর কথায় মর'ে গেল! বলেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন তিনি।এদিকে এ ব্যাপারে কথা বলতে জসিম উদ্দিনের বাড়িতে গেলে সেখানে জসিম উদ্দিনকে পাওয়া যায়নি। তার বাড়িতে কথা হয় তার মামা পরিচয়দানকারী মোহা'ম্ম'দ আলীর সাথে। তিনি বলেন, আমা'র ভা'গ্নের (জসিম) সাথে সাথীর কোন খারাপ সম্পর্ক ছিল না। তারা দাম্পত্য জীবনে সুখী ছিল। যখন জসিম ছুটিতে আসতো তখন সাথীও শ্বশুড়বাড়িতে আসতো। তার সাথে আমা'র ভা'গ্নে কোন ধরনের মানসিক অত্যাচার করতে পারে না বলে দাবী করেন তিনি।যৌ'তুকের প্রশ্নের উত্তরে বি'ষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। এবং মেয়ে পক্ষের অ'ভিযোগকে অহেতুক বলে দাবী করেন তিনি।
বি'ষয়টি সম্পর্কে জসিম উদ্দিনের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হয়। তার মামা মোহা'ম্ম'দ আলী প্রদত্ত জসিমের ০১৭৪৭৫'৩'৪৬ নাম্বারে একাধিকবার চেষ্টা করেও ফোন রিসিভ না করায় কোন বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।এ ব্যাপারে নীলফামা'রী সদর থানার ওসি মোমিনুল ইসলাম জানান, থানায় মেয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি অ'ভিযোগ পেয়েছি। আমর'া বি'ষয়টি ত'দন্ত করছি। ত'দন্তসা'পেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাথীর সেই সু'ইসাইড নোটের কথাগু'লো হুবুহু তুলে দেয়া হলো-‘আমি কিছুতেই আমা'র জীবনটা সুখে রাখতে পারবো না যতদিন বেঁচে থাকবো না 'হতে পারব সুখী নিজেকে- অনেক কিছু দিয়ে বুঝাতে চেয়েছি যে আমা'র ভাগ্য দোষের কারণে আজ হয়তো আমা'র কপালে এমন শাস্তি যা কখনও ভাবিনি তাই আমি তোমাকে কিছুই বোঝাতে পারি নাই। শুধু অশান্তি বাড়ছে কমছে না। আমি আমা'র জীবন নিয়ে সুখী নয়। তাই আমা'র মুখ তোমাকে বেঁচে থেকে দেখানোর কোন ইচ্ছা নাই। আমি ভেবেছিলাম হয়ত তুমি আমাকে আবার নিজের মতো করে সাজিয়ে নিবে হয়ত আবার আমাকে ভালবাসবে। যদি তুমি আমাকে একটু শান্তনা দিতে একটু আশা দিতে তবে আমি এইটা কখন ভাবতাম না কিংবা করতাম না। তুমি চেয়েছিলে আমি মর'ে যাই কিংবা আমা'র মৃ'ত্যু হয়। আমাকে নিয়ে থাকা তোমা'র সম্ভব নয় তুমি সবসময় এটাই ভেবেছ এটাই চেয়েছো। তাই হক আমিও চাইনা এত দুঃখ কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকতে। তুমি চাও আমি মর'ি। সত্যই যখন একজন মানুষ সব সম্বল হারায় তবু যদি আশা থাকে তাহলে সে বেঁচে থাকার আশা করে।কিন্তু আমা'দের মধ্যে তাই নাই। তাহলে কি করে আমি বেঁচে থাকবো। তাই ভাবছি। তোমা'র আশ পূরণ হোক আমা'র মৃ'ত্যুতেই আমাকে কেউ ক্ষ'মা করবে না আমি জানি মর'ার পর আল্লাহ না আমি জাহান্নামে যেতে চাইছিলাম না কিন্তু আমা'র জান্নাতে যাওয়ার উপায় নাই।
তবে একটা কথা না বলে পারছি না তবু তুমি সুখে থাকতে পারবা তবে তাই হোক। আমা'র মৃ'ত্যুর পর তুমি তোমা'র স্বপ্ন পূরণ করে সুখী হও। তবে একটা কথা সত্যি আমি তোমাকে মনে প্রাণে ভালবাসতাম এবং তোমাকে নিয়ে সারাজীবন বেঁচে থাকার আশা করেছিলাম। তাই যখন আমা'দের দুজনের মধ্যে নাই বেচে থাকার কোন মানে নাই। তুমি সত্যই মুক্ত। আমি আমা'র বাবা-মাকে কখনও অশান্তিতে থাকতে দিতে পারি না তাই সবাইকে শান্তি দিয়ে আমি অশান্তি নিয়ে চলে যাচ্ছি। আমা'র মা-বাবারে কখনও ছোট 'হতে দিতে পারি না। আমাকে তুমি অনেক কষ্ট দিছ আমাকে তুমি আমি ছোট বলে কিছু করতে বা বুঝতে পারি নাই বলে তুমি আমাকে অনেক শাসিয়েছো তা আর বেশিদিনের জন্য বা বেশিক্ষণের জন্য থাকবে না। আমি নিজে থেকে তোমা'র জীবন থেকে চলে যাচ্ছি।আমা'র মা-বাবাকে আমাকে এত কষ্ট দিয়ে তোমা'র লাভ হল কি একটু বলবা আমি আর বেঁচে থাকব না। তোমা'র রাস্তা সম্পূর্ণ ফাঁ'কা যা ইচ্ছা তাই করতে পারবা। যান আমা'র প্রচুর কষ্ট হচ্ছে মর'ণ যন্ত্রণা উঠে যাচ্ছে আমা'র হাত পা কাঁপছে। আমা'র মা-বাবা আমাকে বৃথা জন্ম দিয়েছিল না পেল আমা'র কাছে কিছু না পেল শান্তি। আমা'র সুখের জন্য কত কিছু করেছিল তা করে তাদের কি লাভ হলো আমা'র কাছে শুধু অশান্তি ছাড়া আর কিছু পেল না। তাই আমি মেয়ে হিসেবে তাদের কাছে অকর্মা'র হয়ে পৃথিবী ছাড়..’ (‘ছাড়লাম’ এই শব্দটি আর শেষ করতে পারেনি সাথী, তখনই ঢলে পড়ে তার নিথর দে'হ)।
Leave a Reply