রাজনৈতিক পরিচয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার আমলে রাজশাহীর সবচেয়ে আ’লোচিত ব্যক্তি তিনি। নবম জাতীয় সংসদে রাজশাহী-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হন এনামুল হক। এবার নিয়ে তৃতীয়বারের মতো তিনি এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।
গত ১০ বছরে তার ব্যক্তিগত সম্পদ বাড়াতে দৃশ্যমান কার্যক্রম অনেক। দেশের বিভিন্ন জায়গায় এমপি এনামুলের ‘এনা প্রপার্টিজ’ কাজও করছে অনেক। বেড়েছে বাড়ি-গাড়িসহ বেশকিছু ব্যবসা'প্রতিষ্ঠান। কিন্তু নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত হলফনামায় তার বার্ষিক আয় ২০১৮ সালের নির্বাচনে কমে গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তিনি বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৪৯ লাখ টাকা। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনে ছিল কাঁ’টায় কাঁ’টায় অর্ধ কোটি টাকা। আবার ২০০৮ সালের নির্বাচনে ছিল ২০ লাখ টাকা। বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট বাড়লেও কৌশলে টাকার পরিমাণ দিয়ে তা উল্লেখ করা হয়।
২০০৮ সালে তার মোট কৃষিজমির মূল্য ছিল ৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা। ২০১৪ সালে গিয়ে হয় ১ কোটি ৫৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। সর্বশেষ নির্বাচনে কৃষিজমির মূল্যের পরিমাণও কম দেখিয়ে উল্লেখ করা হয় ১ কোটি ২৬ লাখ ৫৫ হাজার ৯১৯ টাকা।
এমপি এনামুলের অ’বৈধ সম্পদ ২ হাজার ১২০ কোটি টাকার
দু’র্নীতি দমন কমিশনের চিঠির জবাবে এমপি এনামুল হক ও তার স্ত্রী’ তহুরা হক সম্মিলিতভাবে মাত্র ৮ কোটি ৩৪ লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ টাকার সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এনামুল হকের মালিকানাধীন লিমিটেড কোম্পানি, প্রোপ্রাইটর'শিপ ও পার্টনার'শিপে থাকা ১৪ প্রতিষ্ঠানের তথ্য গো’পন করা হয়েছে।
এ ছাড়া এনা প্রপার্টিজ, সালেহা ই’মা’রত কোল্ড স্টোরেজ, এনা-ডু'ঙ্গা লিজিং, নর্দান পাওয়ার সলিউশন লিমিটেড, এনা ইন্টারন্যাশনাল, এনা কারস, এনা এনার্জি লিমিটেডসহ অন্য প্রতিষ্ঠানে তার শেয়ার বা মালিকানার বি'ষয়টি সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করেননি।
এনা প্রপার্টিজের কর্ণধার এমপি এনামুল হকের নামে ২ হাজার ১২০ কোটি টাকার অ’বৈধ সম্পদের তথ্য পেয়েছে দু’র্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নির্বাচনী হলফনামা’র সম্পদের তথ্য যাচাই করতে গিয়ে ওই পরিমাণ জ্ঞাত আয়বহির্ভূ'ত সম্পদের তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন অনুসন্ধানকারী কর্মক’র্তা উপপরিচালক যতন কুমা’র রায়।
সূত্র জানান, অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৮-০৯ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরের আয়কর রিটার্নে তিনি সম্পদের তথ্য গো’পন করেছেন। তার নামে ১১টি ব্যবসা'প্রতিষ্ঠান থাকলেও আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করা হয়েছে সাতটির আয়; যা দুদক আইন পরিপন্থী।
অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, এনা প্রপার্টিজের নিজস্ব ভবনসহ ১৭টি আবাসন প্রকল্প আছে। যার বর্তমান মূল্য ২ হাজার ১২০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ অর্থের বৈধ উৎসের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এনামুল হকের মালিকানাধীন এনা প্রপার্টিজে তার ও তার স্ত্রী’ তহুরা হকের আনুপাতিক শেয়ার ৪ : ১।
এনা প্রপার্টিজের আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় জমা দেওয়া অডিট প্রতিবেদন ও ব্যাংক ঋণ নেওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে দাখিল করা অডিট প্রতিবেদন আলাদাভাবে তৈরি। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে তিনি ৩১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা গো’পন করেছেন; যা তার জ্ঞাত আয়ের উৎসবহির্ভূ'ত।
একইস'ঙ্গে ২০১২-১৩ অর্থবছরে দাখিল করা আয়কর রিটার্নে তার দুই ছে’লেকে সালেহা ই’মা’রত কোল্ড স্টোরেজ থেকে ৩ কোটি ২৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার শেয়ার প্রদান করা হয়েছে, তা আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করা হয়নি।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এনামুল হকের হলফনামায় বলা হয়, ২০০৮ সালে শুধু বেতন-ভাতা থেকে তার বছরে আয় ছিল ২০ লাখ টাকা। পাঁচ বছর পরে এখন কৃষি, বাড়ি ও দোকান ভাড়া, ব্যবসা ও পেশা থেকে বছরে তার আয় হয় ৫০ লাখ টাকা।
পাঁচ বছর আগে তার পরিবারের পোষ্যদের ৭ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ টাকা বার্ষিক আয় থাকলেও এবারের হলফনামায় পোষ্যদের কোনো আয়ের উৎস নেই উল্লেখ করা হয়।
তার নিজের, স্ত্রী’র ও অন্যদের মোট ১৬ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার সাধারণ শেয়ার থেকে কোনো আয় নেই উল্লেখ করা হয় হলফনামায়। পাঁচ বছর আগে তার স্ত্রী’র নামে থাকা ২ কোটি ৮৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৩৪ লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ টাকায়। নিজ নামে ব্যাংকে আছে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৯১ টাকা ও স্ত্রী’র নামে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৫০০ টাকা।
Leave a Reply