ঢাকা: বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের জার্সি গায়ে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন সাবেক ক্রিকেটার নাঈমুর রহমান দুর্জয়। পরবর্তী সময়ে সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক হওয়া দুর্জয় সেই ফর্ম অব্যা'হত রেখেছেন অবৈ'ধ অর্থ উপার্জন এবং নারী কেলেঙ্কারির মতো ঘটনায়ও। সম্প্রতি এমনই অ'ভিযোগ উঠেছে মানিকগঞ্জ-১ আসনের এই এমপির বিরু'দ্ধে।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুর্জয় ও তার ঘনিষ্ঠজনদের নানান অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, বখরাবাজি নিয়ে প্রকাশিত খবরা-খবরই এখন আলোচনা-সমালোচনার শীর্ষে। দুর্জয়ের নাম আসে আলোচিত ‘পাপিয়াকাণ্ডেও’। বি'ষয়গু'লো এখন বেশ আলোচিত হচ্ছে মানিকগঞ্জেও। আর এসব বি'ষয়ে সরকারকে পড়তে হচ্ছে বিব্রতকর অবস্থায়।
অবৈ'ধ অর্থ-বাণিজ্য
অ'ভিযোগ আছে সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকেই বাড়তি প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে দুই হাতে অর্থ উপার্জন করতে শুরু করেন নাঈমুর রহমান দুর্জয়। দুর্জয়ের ঘনিষ্ঠজনদের ‘ভাগ’ না দিলে মানিকগঞ্জ ও এর আশেপাশের অঞ্চলে কোন কাজ করতে পারেন না সরকারি প্রকল্পের ঠিকাদারেরা। অ'ভিযোগ আছে, জে'লার শিবালয়ের আলোকদিয়ার চরে সোলার বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের কাজ থেমে থাকার নেপথ্যের ‘কারিগর’ খোদ দুর্জয়। ই-টেন্ডারের মাধ্যমে কার্যাদেশ পেলেও স্থানীয় দুর্জয় ম'দদপুষ্টদের দিতে হয় কাজের ভাগ। আর নয়তো প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পণ্য চড়া দামে কিনতে হয় ‘দুর্জয় বাহিনীর’ কাছ থেকে। উল্লেখিত প্ল্যান্টের মাটি ভরাটের কাজে প্রচলিত বাজার দরের চেয়ে কয়েকগু'ণ বেশি মূল্য দাবি করা হয় ঠিকাদারের কাছে। লাভের বদলে লোকসানই হয়ে যাব'ে, তাই উচ্চ মূল্যে মাটি ভরাটের কাজ বন্ধ করতে হয় ঠিকাদারকে।
আরও অ'ভিযোগ আছে, বিআইডব্লিউটিএর বিশাল টার্মিনাল দখল করে দীর্ঘদিন ধরে বালুর ব্যবসা চলছে এমপি দুর্জয়ের নামেই। আরিচা-কাজিরহাট নৌ-রুটে অবৈ'ধভাবে স্পিডবোটের ব্যবসাটিও তার দখলেই। করো'না পরিস্থিতিতে লকডাউনে ঘাটের দখল নেয় দুর্জয় বাহিনীর সদস্যরা। মাঝিদের ঘাট থেকে সরিয়ে দিয়ে অমানবিকভাবে নিজেরা অধিক ভাড়ায় যাত্রী পারাপার শুরু করে। দুর্জয়ের এই অ'পকর্মে পরিবারের সদস্যদেরও জড়িতে থাকার অ'ভিযোগ রয়েছে। চাচা জে'লা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তায়েবুর রহমান টিপুর অত্যাচারে শিবালয় এলাকায় কেউ জমি কিনতে পারছে না। কোনো শিল্পপতি জমি কিনতে গেলেই তিনি চাঁদা দাবি করেন বলেও অ'ভিযোগ রয়েছে।
দুর্জয়ের ছোবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে না নদীমাতৃক দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের নদীগু'লোও। উচ্চ আ'দালতের নির্দেশনা অমান্য করে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন নদীতে ড্রেজিং করে মাটি খনন করা হয়। ব্যবহার করা হয় শতাধিক নি'ষি'দ্ধ এসকিউবেটর ভেকু মেশিন। ফলে মুহূর্তেই ধ্বং'স হয়ে যায় হাজার হাজার পলি জমি, দেখা দেয় নদী ভাঙন।
দুর্নীতি, ঘু'ষ-চাকরি বাণিজ্য
অবৈ'ধ অর্থ উপার্জনের জন্য রাষ্ট্রীয় পদ ও প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ারও অ'ভিযোগ আছে নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বিরু'দ্ধে। নিজ নির্বাচনী এলাকার বেশ কয়েকজন যুবক দুর্জয়ের ঘনিষ্ঠজনদের চাকরির জন্য অর্থ দিয়েছেন বলে অ'ভিযোগ আছে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এসবের সাথে এমপি দুর্জয়ের জড়িত থাকার অ'ভিযোগ আছে। চাকরির বি'ষয়ে রাজধানীতে সাংসদের সরকারি বাসভবনেও বৈঠক হয়েছে বলে দুর্জয়ের বিরু'দ্ধে অ'ভিযোগ তোলেন তারই এলাকার এক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা।
এমপি এবং তার সা'ঙ্গপা'ঙ্গদের পেছনে ঘুরে, ফুট ফরমায়েশ খেটে এবং জীবনের সকল পুঁজি কিংবা ঋণ করে অর্থ দিয়েও চাকরি পাননি, দুর্জয়ের বিরু'দ্ধে এমনই দুর্নীতির অ'ভিযোগ মানিকগঞ্জের অনেকের।
পাপিয়াকাণ্ড
বছরের শুরুতেই অন্যতম আলোচিত ঘটনা মক্ষীরাণী পাপিয়াকে নিয়ে। পাঁচ তারকা হোটেলগু'লোতে পাপিয়ার দরবারে নিয়মিত যারা হাজিরা দিতেন তাদের মধ্যে নাঈমুর রহমান দুর্জয় আছেন বলেও অ'ভিযোগ ওঠে। পাপিয়ার স'ঙ্গে তার ছবিও পট্রকাশ পায়। অ'ভিযোগ আছে, এমপি নির্বাচিত হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ‘লালে লাল’ হওয়া দুর্জয় পাপিয়াপাড়ায় যেতেন হরহা'মেশাই।
দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে দুই দফা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে আয়ের বিস্তারিত তুলে ধরে হলফনামা দেন নাঈমুর রহমান দুর্জয়। প্রথম দফা এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর পাঁচ বছরের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনের আগে যে হলফনামা তিনি দিয়েছেন, তাতে অর্থ-সম্পদ বৃ'দ্ধির প্রমাণ স্পষ্ট।
২০১৪ সালে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, সেসময় তার বাৎসরিক আয় ছিল পাঁচ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এর ঠিক পাঁচ বছর পরেই জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, দুর্জয় তার বাৎসরিক আয় দেখান ৪৩ লাখ ৭৫ হাজার ২০০ টাকা। অর্থ্যাৎ এই সময়ে তার বাৎসরিক আয় বৃ'দ্ধি পায় প্রায় ৮ গু'ণ।
দুইটি গাড়ির মালিক থেকে হয়েছেন তিনটি গাড়ির মালিক। এরমধ্যে অন্তত একটি অর্ধকোটি টাকা মূল্যের বিলাসবহুল ল্যান্ড ক্রুজার। প্রথম দফা এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর বনেছেন একটি পাওয়ার প্লান্টের পরিচালকও।
অ'ভিযোগ আছে, শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে নিজের নামে তো বটেই নামে-বেনামে এবং স্ত্রীর নামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন নাঈমুর রহমান দুর্জয়। মালয়েশিয়াতে করেছেন সেকেন্ড হোম।
তবে এসব অ'ভিযোগ অস্বীকার করেছেন নাইমুর রহমান দুর্জয়। জানতে চাইলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমা'র আয়ের উৎস তো এনবিআর (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) দেখবে। এনবিআর দেখুক আয়ের উৎস, আয়ের টাকা কই গেল? আর মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম? সূত্র কী বলেন?
পাপিয়া ইস্যুতে দুর্জয় বলেন, যারা বলে (আমা'র নাম) তাদেরকেই জিজ্ঞেস করেন। পাপিয়া ইস্যুতে তো অনেকেরই নাম আসছে। সেগু'লো নিয়ে ত'দন্তের পর্যায়ে আছে। পাপিয়া ইস্যুতে যদি কিছু বের হয় তখন দেখা যাব'ে। বের হোক।
নিজের বিরু'দ্ধে আসা অ'ভিযোগের ত'দন্ত হোক বলেও দাবি করেন নাঈমুর রহমান দুর্জয়। তবে নদী থেকে ড্রেজিং করা মাটি নিয়ে স্থানীয়রা ব্যবসা করছেন বলেও স্বীকার করেন তিনি।
তিনি বলেন, নদী থেকে যে মাটি উত্তোলন করা হয়, সেটা রয়েলটি দিয়ে একজন কিনে নেন কারণ নদীর মাটি ড্রেজিং করে তো আর নদীতে ফেলা হবে না। এই ব্যবসা অনেকেই করেন। পাটুরিয়াতে উপজে'লা চেয়ারম্যান করেন। আরিচায় ছাত্রলীগ করতেছে।
নিজস্ব প্রভাবে থাকা এলাকায় ঠিকাদাররা ভাগ না দিয়ে কাজ করতে পারেন না, এই প্রস'ঙ্গে দুর্জয় বলেন, যে প্রকল্প থেকে আমা'র টাকা নেওয়ার কথা উঠেছে সেটা মিথ্যা। এ ধরনের কোন ‘কালচার’ আমা'র এলাকায় নাই। আমা'র কোন লোক এ ধরনের ঠিকাদারকে চাপ দিছে সেটা তো বলতে হবে। আমা'র জানামতে নাই। কেউ যদি চাপ দিয়ে থাকে সেটা অ'ভিযোগ পেলে দেখব যে আমা'র কোন লোক চাপ দিল।
Leave a Reply