রমা'দ্বান আসার দুইদিন আগে হঠাৎ জ্বর। বিকালের দিকে মাত্রা খানিকটা বেড়ে গেলেও সহনীয় পর্যায়েই ছিল। কিন্তু এই সময়ে জ্বর মানেই তো চিন্তার বি'ষয়। আর জ্বরটাও কেমন যেন, এরকম জ্বর এর আগে কখনও অনুভূ'ত হয়নি। একবার আসে, কিছুক্ষণ থাকে আবার চলে যায়। যখন আসে তখন কেমন যেন অস্বস্তি লাগে। হাল্কা জ্বর তবুও কেমন যেন অস্বস্তিকর।
পরের দিন জ্বরের সাথে যোগ হল গলা ব্যাথা আর শরীর ব্যাথা। গরম পানি দিয়ে কুলকুচি করলাম। মধু, কালোজিরা, আ'দা মিশ্রিত গরম পানি খেলাম। দিনে কয়েকবার এরকম করলাম। কিন্তু না, গলা ব্যাথা কমা'র কোন লক্ষণ নেই।
.
রমা'দ্বানের প্রথম দিন থেকেই পিঠ, মাংসপেশী, কোমর', পা, মাথা একে একে ব্যথা শুরু হল। সলাতে রুকু দেওয়ার সময় কোমর' বাঁকা করতেও বুড়োদের মত কষ্ট 'হতে লাগল। রুকু থেকে দাঁড়ালে মাথা ঘুরে উঠত। সিজদা দিলে ও সিজদা থেকে উঠলেও মাথা ঝিমঝিম করত। সলাতের পর নিজে নিজে রুকিয়া করলাম। এই ঝাঁড়ফুকে জ্বর চলে যেত। কিন্তু কিছু সময় পর আবার চলে আসত। আমাকে দুর্বল করে ফেলত।।
.
ইফতারি খাওয়ার সময় লক্ষ্য করলাম মুখে কোন স্বাদ নেই। ভাবলাম, জ্বর তাই হয়ত মুখের রুচি চলে গেছে। কিন্তু না, জিহবার রংটাও পরিবর্তিত হয়ে গেছে। কেমন যেন ফ্যাকাশে লাগছে দেখতে। সাথে ব্যথাও করছে। এরপরের দিন যোগ হল খুশ খুশ কাশি। ও কাশে প্রাণ নেই। শুকনা একদম। মাঝে মাঝে হাল্কা কফ আসে।
.
তাহলে কি করো'নায় আ'ক্রা'ন্ত হলাম? রমা'দ্বানের বাজার করে গিয়ে করো'না আম'দানী করে নিয়ে আসলাম? কিন্তু আমা'র তো কোন শ্বা'সকষ্ট তো নেই, দম বন্ধও তো হয়ে আসছে না, বমি নেই, ডাইরিয়া নেই। নাকি এগু'লো ধীরে ধীরে প্রকাশ পাবে। করো'না চেকার এ্যাপে নিজের অবস্থা উপস্থাপন করে জানতে চাইলে তারা বলল, এই সিম্পটম দেখে বোঝা যাচ্ছে, আপনি করো'না ভাইরাস মাইল্ড টাইপ – এ আ'ক্রা'ন্ত হয়েছেন।
.
এই বি'ষয়ে বলে রাখা ভালো, করো'না ভাইরাসে তিন ধরনের সিম্পটম প্রকাশ পায় –
১। কোন লক্ষণ প্রকাশ না পেয়েই রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে।
এরকম কেইস ৮০% এর উপরে।
২। কারো কারো মাইল্ড বা মৃদ লক্ষণ প্রকাশ পায়। ঘরোয়া ট্রিটমেন্ট নিলে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।
৩। সিভিয়ার কেইজ। এই কেইজে রোগীকে বাঁচানো কঠিন হয়ে যায়।
.
আলহা'ম'দুলিল্লাহ! আমি ঘরোয়া ট্রিটমেন্ট হিসেবে ইফতারির পর ও সাহরীতে গরম পানি পান করতাম, চা খেতাম। আ'দা, লেবু, কালোজিরা, গোলমর'িচ পানিতে দিয়ে গরম করতাম। ঐ গরম পানি একটা পাত্রে ঢেল তাতে তিনবার সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসী, তিনবার তিন ক্বুল ও সকাল বিকালের নিরাপত্তার দু’আগু'লো পাঠ করে ফুঁক দিতাম। এরপর মাথার ওপর তোয়ালে দিয়ে পাঁচ মিনিট ধরে ঐ পানির ভাপ নিতাম। এতে সাময়িক আরাম লাগলেও পুরোদমে গলা ব্যথা বা শরীর ব্যথা ও জ্বর কমত না।
.
হঠাৎ মনে পড়ে গেল যাইনাব আপার কথা। এ মাসের শুরুতে যাইনাব আপা সিভিয়ার পর্যায়ে করো'নায় আ'ক্রা'ন্ত হয়েছিলেন। তিনি একটি রেসিপি বানিয়ে খেয়ে একদিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। ভাবলাম আমিও বানাবো, আমিও খাবো ইন শা আল্লাহ!
রেসিপির জন্য নিলাম –
১। কালোজিরা (দুই চামচ)
২। জিরা (দুই চামচ)
৩। লব'ঙ্গ (দুই চামচ)
৪। মেথি (দুই চামচ)
৫। যয়তুন তেল (দুই চামচ)
৬। মধু (দুই চামচ)
কালোজিরা, জিরা, মেথি ও লব'ঙ্গ ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করলাম আর মধু আর যয়তুন ঢেলে পেষ্ট বানিয়ে নিলাম। পেষ্ট হয়ে এলে একটি পাত্রে ঢেলে রেখে দিলাম। এরপর ইফতারির পর কিবলামুখী হয়ে বসে পাত্রটি হাতে নিয়ে তাতে –
৭বার সূরা ফাতিহা
৭বার দরূদ
৭বার আয়াতুল কুরসি
৩ ক্বুল ৩ বার করে,
সকাল বিকালের নিরাপত্তার দুআগু'লো পড়ে তাতে ফুঁক দিলাম। এরপর এই দু’আট'ি “ওয়া ইযা মা'রিদ্বতু ফাহুয়া ইয়াশফীন (আর আমি যখন অসুস্থ হই, তিনিই আমাকে সুস্থ করেন।)” পড়ে চামচে তুলে অল্পে অল্প করে জিহবাতে নিয়ে আস্তে আস্তে গিলতে লাগলাম। এভাবে দুই চামচ খেলাম।
_
সুবহানাল্লাহ! যাইনাব আপার এই ওষুধ খাওয়ার আধাঘন্টার মধ্যে বিদায় নিল খুশ খুশ কাশি। গলা ব্যথাও খানিকটা কমে এল। বিদায় নিল জ্বর। আরামে ঘু'মালাম, আলহা'ম'দুলিল্লাহ। সাহরীতে খেলাম আরো দুই চামচ। সকালে শরীর একদম হাল্কা লাগছিল। কোন ব্যথা নেই শরীরে।
.
গতকাল ইফতারি খাওয়ার সময় দেখলাম মুখের রুচি ফিরে এসেছে। তৃ'প্তি করে ইফতারি খেলাম। দেখলাম জিহবা তার আগের রূপ ফিরে পেয়েছে। কিন্তু জ্বরটা আর গলা ব্যাথাটা তখনও ছিল। সাহরীতে আরেক ডোজ খেলাম, তাতে ওষুধ শেষ হয়ে গেল। গতকাল সকাল থেকে আমা'র কোন জ্বর নেই কোন গলা ব্যাথা নেই। শরীরে কোন দুর্বলতা নেও। আমি একদম সুস্থ। পুরদোমে সুস্থ। ফালিল্লাহিল হা'ম'দ!
.
আল্লাহর কসম! একটুও বাড়িয়ে বলছি না। এভাবেই আমি দুইদিনে পুরোদমে সুস্থ হয়েছি। মহান আল্লাহ আমাকে সুস্থ করে দিয়েছেন।
এর বাইরে গত পরশু আর গতকাল ইফাতারির পর দুইটা করে কমলালেবু খেয়েছিলাম। আর সাহরীতে একগ্লাস গরম পানি, সাতটি আজওয়া খেজুর আর রাতে ঘু'মাবার আগে ম্যাগি স্যুপ খেয়েছি, যে গু'লো আমি আগে থেকেই খেতাম।
.
বাহ্যিক উপকরণ গ্রহণ ছাড়া আল্লাহর কাছে প্রচুর দুআ করতাম যেন রমা'দ্বানটা অসুস্থতায় না কাটে। রুকিয়া করেছি নিজে নিজে। হাল্কা কিছু দান সদাক্বা করেছি।
.
আলহা'ম'দুলিল্লাহ! যাব'তীয় হা'ম'দ ও সানা একমাত্র আল্লাহর যিনি অসুস্থ হলে আমাকে সুস্থতা দান করেন।
Leave a Reply