দেশবরেণ্য স'ঙ্গীতশিল্পী এন্ড্রু কি’শোর না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। গত সোমবার (৬ জুলাই) রাজশাহীর মহিষবাতানের একটি বেসরকারি হাসপাতা’লে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মা’রা যান তিনি। মৃ’ত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর।
গেল বছর বেশ কিছুদিন অ’সুস্থ থাকার পর এন্ড্রু কি’শোরের শরীরে ব্লাড ক্যান্সার ধ’রা
পড়ে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ৯ সেপ্টেম্বর সি'ঙ্গাপুর যান তিনি। সেখানে দেশটির জেনারেল হাসপাতা’লে চিকিৎসা শুরু হয় শিল্পীর।
শারিরীক অবস্থার উন্নতি হলে গত মাসের ১১ জুন নিজ দেশে ফিরেই পরের দিন রাজশাহীতে যান তিনি। সেখানে বোন ডা. শিখা বিশ্বা’স ও বোনজামাই ডা. প্যাট্রিক বিপুল বিশ্বা’সের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আর সেখানেই জীবনের শেষ নিঃশ্বা’স ত্যাগ করেন এন্ড্রু কি’শোর।
বাবা ক্ষীতিশ চন্দ্র বাড়ৈ। মা রাজশাহীর বুলনপুর মিশন গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষিকা মিনু বাড়ৈ। মায়ের কাছেই তার পড়াশোনায় হাতেখড়ি। রাজশাহীতে কে’টেছে তার শৈশব-কৈশোর ও যৌ'বনকাল। মা মিনু ছিলেন সংগীত অনুরাগী মানুষ। তার প্রিয় শিল্পী কি’শোর কুমা’র।
সেই শিল্পীর নামে নিজের সদ্যোজাত সন্তানের নাম রাখলেন ‘কি’শোর’। ধীরে ধীরে ছে’লেটি বড় হয়ে উঠলো। মায়ের স্বপ্ন পূরণ করে সে সংগীতা'ঙ্গনেই পা রাখলো। তারপর একদিন স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে সেই ছে’লে তার দেশে কি’শোর কুমা’রের মতোই বিখ্যাত ও কিংবদন্তি হয়ে উঠলো।
তিনি আর কেউ নন, সদ্য প্রয়াত সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কি’শোর। যার সংগীতে প্রথম পাঠ শুরু রাজশাহীর আবদুল আজিজ বাচ্চুর কাছে। সত্তর দশকের শেষ দিকে প্লেব্যাকের জগতে পা রাখার পর থেকে বাংলা, হিন্দিসহ বহু চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন ভালোবাসার নন্দিত সিংহাসনে।
তার সার্টিফিকেট নাম কিন্তু এন্ড্রু কি’শোর ছিল না। ছিল এন্ড্রু কি’শোর কুমা’র বাড়ৈ। গান করতে এসে বাবা-মায়ের দেয়া পারিবারিক সেই নাম কে’টে ছেটে নিয়েছিলেন নিজের মতো করে। সেই গল্প এক সাক্ষাৎকারে শুনিয়ে গেছেন তিনি নিজেই।
তার ভাষ্যে, যখন ফিল্মে গান শুরু করলাম একদিন দেওয়ান নজরুল নামের একজন পরিচালক বললেন, ‘আচ্ছা এন্ড্রু, তোমা’র এত বড় একটা নাম। কমা’র্শিয়ালি কিন্তু এ নামের কোনো ভ্যালু নেই! এই নামটা শুট করতেই তো ১০ রিল ফিল্ম বেশি লাগবে।
তাছাড়া পৃথিবীতে অধিকাংশ তারকাদের নাম দুই শব্দের হয়। যেমন এলভিস প্রিসলি, লতা মু'ঙ্গেশকার, উত্তম কুমা’র, মোহা'ম্ম’দ রফি, কি’শোর কুমা’র সবারই দুই শব্দের নাম। খামোখা তুমি এই চার শব্দের নাম নিয়ে কেন ঘুরছ? লোকে তো মনে রাখতে পারবে না।’
পরিচালকের সেই কথাগু'লো এন্ড্রু কি’শোরের মনে দাগ কে’টেছিল। তিনি সি'দ্ধান্ত নেন নাম ছোট করার। কিন্তু বিপদ ঘটলো চার শব্দের কোন শব্দ ফেলবেন আর কোন শব্দটা রাখবেন সে নিয়ে। ওই সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম। কি’শোর যেহেতু মায়ের দেয়া ডাকনাম, সেটা তো রাখতেই হবে।
আবার কুমা’র রাখলে কি’শোর কুমা’রের স'ঙ্গে মিলে যাব'ে। ঝামেলা হয়ে যাব'ে। ক্রিশ্চিয়ানিটির কারণে ‘এন্ড্রু’টাও রাখতেই হবে। তাহলে পৈতৃক ‘বাড়ৈ’ টাইটেলটা ফেলে দিই। এটা ভেবে আমি রাজশাহীতে বাবাকে গিয়ে ব্যাপারটা জানালাম। এ কথা শুনে বাবা খুবই দুঃখ পেলেন।
বললেন, ‘বাপদাদার টাইটেলটা ফেলে দিবি?’ আমি বললাম, ‘না বাবা, ফেলে দেওয়ার ব্যাপার না। নিজের প্রফেশনের প্রয়োজনই এটা করতে হবে। সার্টিফিকে’টে তো সবই থাকছে।’ সে থেকে কুমা’র আর বাড়ৈ ফেলে দিয়ে হয়ে গেলাম ‘এন্ড্রু কি’শোর’।’
বর্তমানে এন্ড্রু কি’শোরের ম’রদে'হ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতা’লের হিমঘরে রাখা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া থেকে শিল্পীর দুই সন্তান দেশে ফিরলে আগামী ১৫ জুলাই মায়ের পাশে সমাহিত করা হবে এ কিংবদন্তিকে। বি'ষয়টি গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন প্রয়াত শিল্পীর বোনজামাই ডা. প্যাট্রিক বিপুল বিশ্বা’স।
বিপুল বিশ্বা’স জানিয়েছেন, এন্ড্রু কি’শোরের দুই সন্তান অস্ট্রেলিয়াতে আছেন। বুধবারে ছে’লে স'প্তক দেশে ফিরবেন এবং আগামী ১৪ জুলাই আসবেন মে’য়ে স'ঙ্গা। তারা দু’জন দেশে ফেরার পরদিনই ১৫ জুলাই সকালে ধ’র্মীয় রীতিনীতি মেনে সমাহিত করার কাজ শুরু করা হবে।
তিনি এও বলেন, যদি প্রশা’সনের কাছে অনুমতি পাই, তাহলে রাজশাহী বিশ্বিবদ্যালয়ের
শ’হীদ মিনারে সর্বসাধারণের শ্র'দ্ধা জানানোর জন্য রাখা হবে। এরপর তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করা হবে বলেও জানান শিল্পীর বোনজামাই ডা. প্যাট্রিক বিপুল বিশ্বা’স।
Leave a Reply